বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০

মুসলমানদের সনাতন ধর্ম চর্চা বনাম হিন্দু ধর্মের পূর্ণাঙ্গতা



মুসলমানদের সনাতন ধর্ম চর্চা বনাম হিন্দু ধর্মের পূর্ণাঙ্গতা :


গান-বাজনা, সনাতন তথা হিন্দু ধর্মের অঙ্গ, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু মুসলমানরা অবাধে গান বাজনার চর্চা করছে, শুনছে। বর্তমানে গান-বাজনা ছাড়া মুসলমানদের যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান এবং ঈদের আনন্দ মাটি। তাহলে ইসলামে যে গান বাজনা হারাম, তার বাস্তবতা কোথায় ? এই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস দেখে নিন :
"বানর আর শুকর মানেই যারা পূর্বে বাদ্যযন্ত্র বাজাতো।" (বোখারি-৭/৬৯/৪৯৪)
“গান মানুষের অন্তুরে মুনাফেকির জন্ম দেয় যেমন পানি শস্য উৎপাদন করে।-মিশকাত শরীফ, ৪১১
“আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।” – (সহীহ বুখারী, ৫৫৯০)
এই কথাটা একবার ভাবুন তো, আপনি যদি গান করেন, তাহলে কার কী ক্ষতি করছেন, যে তাকে নিষিদ্ধ করতে হবে ?
নাচও সনাতন তথা হিন্দু ধর্মের একটা অঙ্গ। কিন্তু অনেক মুসলমান এখন নাচের চর্চা করছে। তাছাড়া নাচ দেখে না বা দেখতে পছন্দ করে না, এমন মুসলমান বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে ইসলামে নাচ নিষিদ্ধের বাস্তবতা কোথায় ? নাকি ইসলামই সম্পূর্ণ একটি অবাস্তব ধর্ম ?
দেখে নিন নাচ সম্পর্কিত দুটি হাদিস :
“একদিন হযরত আয়েশা (রা.) এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা রা. বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি (নূপুর) থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।”- (সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭)
সহীহ মুসলিমের ২১১৪ নং হাদিসে বলা আছে, “ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।”
কবিতা লিখা, ছবি আঁকা, ছবি তোলা, ভাস্কর্য তথা মূর্তি নির্মান হিন্দু ধর্মের একটা প্রধান বিষয়, যা মুসলমানদের জন্য মহাপাপ। কিন্তু বর্তমানের মুসলমানরা ছবি আঁকছে না ? ছবি তুলছে না ? সিনেমা টিভিতে অভিনয় করছে না ? সিনেমা বানাচ্ছে না ? টিভি চ্যানেল খুলে ব্যবসা করছে না ? সংখ্যায় অল্প হলেও মুসলমানদের কেউ কেউ ভাস্কর্য শিল্পের সাথে জড়িত নয় ?
ইসলামের সোল এজেন্ট সৌদি আরব, পাসপোর্টে ছবি ছাড়া, হাজীদেরকে আরবে ঢুকতে দেবে ? ইসলাম বিরোধী- ছবি তোলা চর্চা করে ও তাকে প্রশ্রয় দিয়ে সৌদি আরব ইসলামের চর্চা করছে না হজের নামে ব্যবসা করছে ? বর্তমানে মুসলমানরা কি পাসপোর্টের জন্য ছবি না তুলে পার্থিব বেহেশত- ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায়, বৈধভাবে ঢুকতে পারবে ? ইসলামে ছবি তোলা নিষিদ্ধ হওয়ায়, এটা স্পষ্ট যে ইসলাম একটি সম্পূর্ণ অবাস্তব ধর্ম ।
উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো সবই সনাতন তথা হিন্দু ধর্মের চর্চার বিষয়। অথচ মুসলমানরা অবাধে এসব চর্চা করে চলেছে, আর নিজেদেরকে পরিচয় দিচ্ছে মুসলমান হিসেবে! ভণ্ডামী আর কাকে বলে ? যাদের কাছে মনে হচ্ছে আমি এসব অযথা ই বলছি, কোরান হাদিস থেকে তাদের জন্য কয়েটি রেফারেন্স:
"আর কবিদের কথা ! তাদের পেছনে চলে বিভ্রান্ত লোকেরা। তোমরা কি দেখো না যে, প্রতিটি প্রান্তরে তারা বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরে মরে, এবং এমন সব কথা বার্তা বলে, যা তারা নিজেরা করে না"। (কোরান-২৬/
২৩,২৪,২৫)
"মাথা ভর্তি কবিতার চেয়ে পেট ভর্তি পুঁজ উত্তম।" (বোখারি, ৮/৭৩/১৭৫)
"যে ঘরে কুকুর ও ছবি আছে, সেই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।"
"নিশ্চয় জানিও আল্লার নিকটে তথা আখেরাতে সর্বাধিক কঠিন আজাব হবে ছবি তৈরি কারকদের।"
"যদি কেহ জীবজন্তুর ছবি অংকন করা হারাম জানা সত্ত্বেও উহা অংকন করে তবে সে কাফের হইয়া যায়।"
উপরের বলা কথাটি আবারও বলতে হচ্ছে, ছবি তুলে বা ছবি এঁকে, আপনি কার পাকা ধানে মই দিচ্ছেন যে, তাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে ?
জন্মসূত্রেই প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো বিষয়ের প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। সুযোগ ও পরিবেশের অভাবে কেউ তার সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে, কেউ পারে না। কিন্তু প্রতিটি মানুষ তার প্রকৃতি প্রদত্ত প্রতিভার আলোকে কিছুটা আলোকিত হবেই এবং তা হয় ই। কিন্তু যখন কোনো মুসলমান, বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং ইসলামি জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে জানতে পারে যে, এই সব সুকুমার বৃত্তির শিল্পচর্চা ইসলামে হারাম, তখন সে দ্ধিধাদ্বন্দ্বে পড়ে এবং পাপবোধে বা অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে কেউ কেউ ঐ সব শিল্পের চর্চা তথা কবিতা লিখা, ছবি তোলা, ছবি আঁকা, ভাস্কর্য নির্মান, গান-বাজনা, নাচ ইত্যাদি ছেড়ে দেয়; আর কেউ ইসলামের এই সব নিষেধাজ্ঞাকে ফালতু মনে করে ঐ ব শিল্পের চর্চা চালিয়ে যায়। কিন্তু কোরান হাদিসে স্পষ্ট বলা আছে, ঐসব শিল্পচর্চা শিরকি, অর্থাৎ জেনে বুঝে কোনো মুসলমান ঐ সব কাজ করলে, সে আর মুসলমান থাকবে না, সে হবে জাহান্নামী। তাই যেসব মুসলমান ইসলামি নাম ধারণ করে ঐসব শিল্পের চর্চা করে, তারা একটা পাপবোধ বা অপরাধবোধে ভুগবেই। এজন্য আমি বলি কি, মনে পাপবোধ নিয়ে এসব করার কী দরকার ? নাম চেঞ্জ করে বা না করে সনাতন হিন্দু ধর্ম পালন করে এসব করলে মনেও শান্তি পাবেন, আর এসব শিল্পচর্চায় আকাশচুম্বী সাফল্যও পাবেন। মনে দ্বিধা নিয়ে কোনো কাজে কি চুড়ান্ত সাফল্য পাওয়া যায় ?
এই নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর চর্চা মুসলমানরা করতে বাধ্য হয়ে এটা প্রমান করছে যে, ইসলাম সম্পূর্ণ একটি অবাস্তব ধর্ম। মুখে মুসলমানরা যতই বলুক যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান; বাস্তবে হিন্দুদের কাছ থেকে এই বিষয়গুলি ধার না করে সমাজে তাদের চলবার উপায় নেই।
"পক্ষান্তরে হিন্দু সমাজে এবং হিন্দু ধর্মে- এমন কোনো বিষয় নেই যে, তা ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্ম থেকে ধার করা।"
আমার এই কোট করা কথাটি গভীরভাবে ভেবে দেখবেন, হিন্দু ধর্ম নিয়ে যদি আপনার কোনো হীনম্মন্যতা থাকে, তাহলে তা দূর হয়ে যাবে।
তাই এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, অন্য কোনো ধর্ম নয়, হিন্দু তথা সনাতন ধর্মই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ধর্ম এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এজন্যই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, "গর্বের সাথে বলো আমি হিন্দু।"
জয় হিন্দ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন